শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. তাকজিল খলিফা কাজল শিক্ষা ও সম্পদে দিক থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদীন আব্দুর চেয়ে এগিয়ে। একই সঙ্গে প্রচারণায়ও এগিয়ে আছেন তিনি। দুই প্রার্থীর হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
চতুর্থ ধাপে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যেই মূলত লড়াই হবে বলে ধারণা পাওয়া যায়। মেয়র পদে লড়াই করা অন্য দুই প্রার্থী হলেন, সাবেক পৌর মেয়র মো. নূরুল হক ভূঁইয়া ও যুবলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নূরুল হক ভূঁইয়া নারিকেল গাছ ও মো. শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে আখাউড়ায়।
হলফনামা থেকে জানা যায়, দুইবার নির্বাচিত মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মো. তাকজিল খলিফা কাজল স্নাতক পাশ। অন্যদিকে সাবেক কাউন্সিলর ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন হলফনামার শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে স্ব-শিক্ষিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম খান শিক্ষায় সবচেয়ে এগিয়ে। তিনি স্নাতকোত্তর (এমএমএস) পাস। অন্যদিকে আরেক বিদ্রোহী নূরুল হক ভূঁইয়া এইচএসসি পাস।
সম্পদের হিসেব থেকে দেখা যায়, বিএনপির জয়নাল আবেদীন ১৫ একর অর্থাৎ ১৫০০ শতক কৃষি জমি ও ১৪.৯৩ শতক অকৃষি জমির মালিক। বিপরীতে তাকজিল খলিফার রয়েছে ৩৩৯.৪৯ শতক কৃষি জমি ও ৩১.৮১ শতক অকৃষি জমি। তাকজিল খলিফা স্ত্রীর নামে রয়েছে আরো ২৪৮ শতক কৃষি জমি। এছাড়া দুইটি আবাসিক ভবন ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট/ বাড়ি রয়েছে তাঁর। নগদ ও ব্যাংকে তাঁর রয়েছে ২৯ লাখ ৪১ হাজার ১৬৭ টাকা। স্ত্রীর কাছে রয়েছে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এদিকে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে তাকজিল খলিফা কাজলের স্ত্রীর। আর তাঁর নিজের রয়েছে ২১ তোলা। অন্যদিকে জয়নাল আবেদীন ১৫ ভরি স্বর্ণালংকারের মালিক। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তাকজিল খলিফার রয়েছে একটি পিস্তল।
আয়ের দিক থেকে তাকজিল খলিফা কাজল বেশ এগিয়ে। তিনি মৎস্য চাষ, গবাদি পশুর খামার, পোল্ট্রি ফার্ম (লেয়ার), কৃষি, আমদানি-রপ্তানি, সিএন্ডএফ এজেন্ট থেকে বছরে আয় করেন ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩০০ টাকা। এছাড়া সম্মানি হিসেবে পান চার লাখ ৮০ হাজার টাকা।
জয়নাল আবেদীন আব্দুর ব্যবসার মূলধন ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু সেটা থেকে তিনি কোনো আয় দেখাননি। তবে কৃষি ও অন্যান্য খাত থেকে তাঁর বছরে আয় দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা। তাঁর কাছে নগদ রয়েছে আড়াই লাখ টাকা। জয়নাল আবেদীনের নামে একটি মামলা চলমান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তাকজিল খলিফা কাজলের অকৃষি জমিগুলো বেশিরভাগই শহর কেন্দ্রিক রয়েছে। মেয়র হওয়ার পরই তিনি এসব সম্পতি কিনেছেন। এসব সম্পতির মূল্যও তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জয়নাল আবেদীনের কৃষি জমিগুলো বেশিরভাগই গ্রামের দিকে হওয়ায় এসবের বাজার মূল্য কম।
হলফনামায় নূরুল হক ভূঁইয়া তার বার্ষিক আয় হিসেবে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। তাঁর কাছে নগদ দুই লাখ ও ব্যাংকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা রয়েছে। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে তাঁর। এছাড়া পৌর এলাকার রাধানগরে রয়েছে পৌনে তিনশতক জায়গার বাড়ি।
দেবগ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম খানের নিজ নামে কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই। পেশায় তিনি আমদানি-রপ্তানিকারক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বার্ষিক আয় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ এক লাখ টাকা আছে। এছাড়া ব্যবসায়ের মূলধন রয়েছে সাত লাখ ৫৮ হাজার টাকা। স্ত্রীর রয়েছে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার।
প্রচারণার দিক থেকে বেশ এগিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগের পাশাপাশি এলাকার যুবকদের ১৮টি দল প্রতিদিন প্রচারণায় নামছেন। বীনা ঘোষ লাকি নামে এক নারী বাড়ি বাড়ি গিয়ে গান গেয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। প্রার্থী নিজে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়ার বিষয়টি এবার ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
এদিকে দলীয় কোন্দলের কারণে প্রচারণায় অনেকটাই পিছিয়ে আছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। সম্প্রতি পৌর কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়ায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি ঘোষিত ওই কমিটির ৩১ জনের মধ্যে ১১ জনই পদত্যাগ করায় বিরোধের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এছাড়া উপজেলা কমিটি না থাকায় দলের প্রার্থী জয়নাল আবেদীন আরো বিপাকে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুই প্রার্থী খুব বেশি সুবিধা করতে পারবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। নূরুল হক ভূঁইয়ার ছেলে চলচ্চিত্র অভিনেতা রোশান তফসিল ঘোষণার আগে এলাকায় এসে প্রচারণায় ভিন্নমাত্রা যোগ করেন। তবে ভোটের মাঠে রোশান কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারবেন এ নিয়ে আলোচনা আছে।